লাল চিনি (Lal Chini) |
আমি গত ১৫ বছরে ঢাকার বসবাসকারী অনেক লোকে জিজ্ঞাসা করে তেমন কাউকে পেলানা যে লাল চিনি বলে কিছু চেনে। খুব কষ্ট পেয়েছি যে আমরা সবাই একই দেশে বাস করছি।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলাদেশে প্রস্তুত চিনি প্রচুর পরিমানে বৃটেনে রপ্তানী হত। ঐতিহ্য সন্ধানের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি অন্যান্য দেশ-জাতির সাথে আমাদের অতীত সম্পর্ক, সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থা। স্বল্প পরিসরে লাল চিনি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করছি।
ময়নসিংহ এলাকায় লাল চিনির এতিহ্য- এই বাংলাদেশ পূর্বে এক সমৃদ্ধশালী জনপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে সেকালে সমৃদ্ধশালী এ অঞ্চল থেকে ভিনদেশে যে সকল পণ্য রপ্তানী হতো তার মধ্যে অন্যতম ছিল চিনি। প্রাচীন বাংলায় আগত বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমন বিবরণীতে "লাল চিনি" শব্দটির উল্লেখ লক্ষ্যণীয় এবং তা আজও "লাল চিনি" বলে পরিচিতি।
→ লাল চিনি কিভাবে তৈরি হয়ঃ
প্রথমে আখ থেকে রস বের করা হয়। রস বের করার পর মাটিতে গর্ত করে তৈরি চুলায় কড়াই বসিয়ে রস জ্বাল দেওয়া হয়। রস পূর্ণ জ্বাল হওয়ার পর কড়াইসহ চুলা থেকে নামিয়ে কাঠের ডাং বা কাঠি আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় ‘ডোভ’ দিয়ে বিরামহীন ঘুটতে থাকে যতক্ষন না শুকনো ধূলার মত আকার ধারন করে। আখের গুণগত মান খারাপ হলে ধূলারমত না হয়ে গুটি গুটি আকার ধারণ করে। ধূলারমত বা গুটির মত যাই হোক, ময়মনসিংহ এর ভাষায় এটাই "লাল চিনি"। চিনি তৈরী করার জন্য যে অস্থায়ী গৃহ নির্মাণ করা হয় তাকে বলা হয় জ্বাল ঘর। দেখতে ধূসর খয়েরী হলেও সাদা চিনির বিপরীতেই হয়তো লাল চিনি নামকরণ। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দোকানে চিনি কিনতে গেলে দোকানদার জিজ্ঞাসা করতো "লাল চিনি-না সাদা চিনি?"
→ লাল চিনির বৈশিষ্টঃ
লাল চিনির কিছু লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য আছে। যে কোন আখ থেকেই গুরু উৎপন্ন হয়। কিন্তু যে কোন জাতের আখ থেকে লাল চিনি উৎপন্ন হয় না। এমনকি একই এলাকার একই জাতের আখ ভিন্ন ভিন্ন মাটিতে চাষ করলেও চিনির গুণগত মানের তফাৎ হয়। অন্য দিকে চিড়া, মুড়ি প্রভৃতির মোয়া তৈরিতে লাল চিনির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। লাল চিনির মত এত সুন্দর মোয়া আর কিছুতেই হয় না। লাল চিনি অর্ধপোড়া করে এক প্রকার শিশু খাদ্য তৈরী হয় যা অত্র এলাকায় কটকটি নামে পরিচিত। বাংলা অভিধানে কটকটি শব্দের যে দুটি অর্থ দেওয়া আছে তার একটি-কটকট শব্দে দাঁতে কেটে খাবার মিঠাই বিশেষ। আমদের ধারণা লাল চিনির তৈরি কটকটিই সেই মিঠাই। লাল চিনির শরবত ! অনেক স্বাদ এবং জন্ডিস এর সময় চরম উপকারী। পিঠা, পায়েস, খাজা, গজা, সুজি, নাড়ু, মুয়া, বাতাসা, জিলাপি, খোরমা, আচার তৈরির কাজেও লাল চিনি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন আয়ুর্বেদীয় হেকিমি কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে লাল চিনি ব্যবহার করা হয়। পৌষ থেকে চৈত্র-বৈশাখ পর্যন্ত লাল চিনি তৈরির মৌসুম। ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলায় এর উৎপাদন বেশি হয়।
→ আমার দেখাঃ
নানা বাড়িতে ছোট বেলায় আমার চোখের সামনে ২০০-৩০০ মন "লাল চিনি" উৎপান দেখেছি। এখন আমার নানা মারা যাওয়ার পর আর দেখা যায় না । আমি গত এক মাস আগে ময়মনসিংহ থেকে কিছু খানি "লাল চিনি" নিয়ে এসেছি তার ছবি তুলে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । এই লেখাটিতে উৎসাহ পেলে ভবিৎতে আরও বিস্তাতির লিখবো।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলাদেশে প্রস্তুত চিনি প্রচুর পরিমানে বৃটেনে রপ্তানী হত। ঐতিহ্য সন্ধানের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি অন্যান্য দেশ-জাতির সাথে আমাদের অতীত সম্পর্ক, সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থা। স্বল্প পরিসরে লাল চিনি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করছি।
ময়নসিংহ এলাকায় লাল চিনির এতিহ্য- এই বাংলাদেশ পূর্বে এক সমৃদ্ধশালী জনপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে সেকালে সমৃদ্ধশালী এ অঞ্চল থেকে ভিনদেশে যে সকল পণ্য রপ্তানী হতো তার মধ্যে অন্যতম ছিল চিনি। প্রাচীন বাংলায় আগত বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমন বিবরণীতে "লাল চিনি" শব্দটির উল্লেখ লক্ষ্যণীয় এবং তা আজও "লাল চিনি" বলে পরিচিতি।
→ লাল চিনি কিভাবে তৈরি হয়ঃ
প্রথমে আখ থেকে রস বের করা হয়। রস বের করার পর মাটিতে গর্ত করে তৈরি চুলায় কড়াই বসিয়ে রস জ্বাল দেওয়া হয়। রস পূর্ণ জ্বাল হওয়ার পর কড়াইসহ চুলা থেকে নামিয়ে কাঠের ডাং বা কাঠি আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় ‘ডোভ’ দিয়ে বিরামহীন ঘুটতে থাকে যতক্ষন না শুকনো ধূলার মত আকার ধারন করে। আখের গুণগত মান খারাপ হলে ধূলারমত না হয়ে গুটি গুটি আকার ধারণ করে। ধূলারমত বা গুটির মত যাই হোক, ময়মনসিংহ এর ভাষায় এটাই "লাল চিনি"। চিনি তৈরী করার জন্য যে অস্থায়ী গৃহ নির্মাণ করা হয় তাকে বলা হয় জ্বাল ঘর। দেখতে ধূসর খয়েরী হলেও সাদা চিনির বিপরীতেই হয়তো লাল চিনি নামকরণ। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দোকানে চিনি কিনতে গেলে দোকানদার জিজ্ঞাসা করতো "লাল চিনি-না সাদা চিনি?"
→ লাল চিনির বৈশিষ্টঃ
লাল চিনির কিছু লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য আছে। যে কোন আখ থেকেই গুরু উৎপন্ন হয়। কিন্তু যে কোন জাতের আখ থেকে লাল চিনি উৎপন্ন হয় না। এমনকি একই এলাকার একই জাতের আখ ভিন্ন ভিন্ন মাটিতে চাষ করলেও চিনির গুণগত মানের তফাৎ হয়। অন্য দিকে চিড়া, মুড়ি প্রভৃতির মোয়া তৈরিতে লাল চিনির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। লাল চিনির মত এত সুন্দর মোয়া আর কিছুতেই হয় না। লাল চিনি অর্ধপোড়া করে এক প্রকার শিশু খাদ্য তৈরী হয় যা অত্র এলাকায় কটকটি নামে পরিচিত। বাংলা অভিধানে কটকটি শব্দের যে দুটি অর্থ দেওয়া আছে তার একটি-কটকট শব্দে দাঁতে কেটে খাবার মিঠাই বিশেষ। আমদের ধারণা লাল চিনির তৈরি কটকটিই সেই মিঠাই। লাল চিনির শরবত ! অনেক স্বাদ এবং জন্ডিস এর সময় চরম উপকারী। পিঠা, পায়েস, খাজা, গজা, সুজি, নাড়ু, মুয়া, বাতাসা, জিলাপি, খোরমা, আচার তৈরির কাজেও লাল চিনি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন আয়ুর্বেদীয় হেকিমি কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে লাল চিনি ব্যবহার করা হয়। পৌষ থেকে চৈত্র-বৈশাখ পর্যন্ত লাল চিনি তৈরির মৌসুম। ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলায় এর উৎপাদন বেশি হয়।
→ আমার দেখাঃ
নানা বাড়িতে ছোট বেলায় আমার চোখের সামনে ২০০-৩০০ মন "লাল চিনি" উৎপান দেখেছি। এখন আমার নানা মারা যাওয়ার পর আর দেখা যায় না । আমি গত এক মাস আগে ময়মনসিংহ থেকে কিছু খানি "লাল চিনি" নিয়ে এসেছি তার ছবি তুলে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । এই লেখাটিতে উৎসাহ পেলে ভবিৎতে আরও বিস্তাতির লিখবো।