সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে "সোয়াইন ফ্লু" (সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে নানা তথ্য )সোয়াইন ফ্লুর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে গিয়ে অসহায় ডাব্লুএইচও

সোয়াইন ফ্লু মোকাবেলায় টামিফ্লু প্রতিষেধক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে জার্মানি





সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে সোয়াইন ফ্লু


মেক্সিকোয় প্রথম সন্ধান পাওয়া গেলেও ‘সোয়াইন ফ্লু’ উত্তর আমেরিকার বাকি দেশ ঘুরে ক্রমশঃ ভারত, বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা জারি করলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই মুহূর্তে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই৷

গোটা বিশ্বেই সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ এই রোগ ঠেকাতে ইতিমধ্যে দেশে দেশে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে৷ সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য৷


সোয়াইন ফ্লু কী?

সোয়াইন ফ্লু হচ্ছে মানব দেহের ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মতোই এক ধরণের ভাইরা

স যা প্রধানত শূকরের দেহে দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে৷ শূকরের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য মানবদেহের সাথে

বেশ মিল থাকায় এ ভাইরাসটি পাখির চেয়ে বেশি দ্রুত মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে৷ গত দশকে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল এই যে, এভিয়েন ফ্লু অর্থাৎ এইচফাইভএনওয়ান ভাইরাস পাখির দেহ থেকে শূকরের দেহে আশ্রয় নিয়ে সহজেই তা মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারতো৷ তবে সৌভাগ্যবশত এমন কিছু ঘটেনি৷

সোয়াইন ফ্লু কি মানবদেহে আগে কখনো সংক্রমিত হয়েছিল?

১৯৫০ সাল থেকে কখনো কখনো শূকর লালন পালনকারী মানুষদের দেহে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে৷ ১৯৫৮ সাল থেকে ইউরোপে ১৭ জনের দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি সেনা ছাউনিতে ১৯৭৬ সালে ২০০ সৈন্যের দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিল৷ এদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং একজন মারা গিয়েছিল৷

সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের লক্ষণগুলো কী কী?

মানবদেহের সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই কাশি, হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যাথা, পেশির খিঁচুনি ই

ত্যাদি৷ তবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়া, একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে৷ সাধারণ ফ্লু-র মতোই এরাও দুই থেকে পাঁচদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে৷

----------------------------

সোয়াইন ফ্লুর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে গিয়ে অসহায় ডাব্লুএইচও

সোয়াইন ফ্লু ক্রমশ আরো ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশে৷ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লুএইচও জানাচ্ছে, সোয়াইন ফ্লুর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে তারা অসহায়৷ ওদিকে মেক্সিকোয় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২৷

সোয়াইন ফ্লু-র দ্রুতবেগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়াকে আটকাতে পারছে না বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লু এইচও৷ মঙ্গলবার এ বিষয়ে নিজেদের অসহায়তা তারা জানিয়ে দিয়েছে৷ সেইসঙ্গে ইতিপূর্বে এই প্রাণঘাতী রোগের সম্পর্কে যে মহামারী সতর্কতা জারি করেছিল ডাব্লুএইচও, তার মাত্রা তিন থেকে চারে অর্থাৎ আরও একধাপ ওপরে চড়িয়ে দেবার ঘোষণাও করা হয়েছে৷ জেনেভায় মঙ্গলবার ডাব্লুএইচও-এর মুখপাত্র গ্রেগরি হার্টল বলেছেন, সীমান্ত সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যপরীক্ষার নজরদারীর মাধ্যমে সোয়াইন ফ্লু-এর ছড়িয়ে পড়াকে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না৷


এখানে উল্লেখ্য, সোয়াইন ফ্লু রোগের ভাইরাস, যেটিকে এইচ ওয়ান এন ওয়ান বলে চিহ্নিত করেছে ডাব্লুএইচও, সেই ভাইরাসের বিস্তৃত সংক্রমণকে ঠিক কীভাবে রোখা যেতে পারে, সে বিষয়ে কোন বিশেষ পদ্ধতি এখনও বের করা যায় নি৷ যে কারণে ডাব্লুএইচও-এর স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং পরিবেশ বিষয়ক সহকারী মহাপরিচালক কেইজি ফুকুদা সোয়াইন ফ্লু-র সহজে সর্বত্রগামী ভাইরাসের চরিত্র ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই বিমানের যুগে মানুষ যখন অতি দ্রুতবেগে একদেশ থেকে অন্যদেশে যাতায়াত করছে সেখানে বিশ্বের কোন প্রান্তই সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের আতঙ্কমুক্ত নয়৷ যদিও ডাব্লুএইচও কখনওই কোন বিশেষ দেশের সীমান্ত বন্ধ করার পক্ষপাতী নয় কিংবা ডাব্লুএইচও কোন অবস্থাতেই চায় না, কোন বিশেষ দেশে ভ্রমণের ওপর জারি করা হোক নিষেধাজ্ঞা, বলেছেন ফুকুদা৷
--------------------------------------

বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু’তে প্রথম মৃত্যু


সোয়াইন ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মারা যাওয়া মিতা চক্রবর্তীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে রোববার রাতে তাঁর গ্রামের বাড়ি সাভারে৷ তার পরিবারসহ গোটা সাভারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া৷


ভারতে সোয়াইন ফ্লুতে মৃতের সংখ্যা ১০০


ভারতে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে৷ দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রী গোলাম নবী আজাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এইচওয়ানএনওয়ান ফ্লু ভাইরাসের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন৷


ফ্লু আতঙ্কে কমছে বিমান ভ্রমণকারীর সংখ্যা


বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই কমছে বিমানে ভ্রমণকারীর সংখ্যা৷ আর এজন্য দায়ি করা হ

চ্ছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং সোয়াইন ফ্লুর বিস্তারকেই৷ এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এয়ার লাইন্সগুলোর সংগঠন এএপিএ জানিয়েছে এই তথ্য৷

হাসপাতালে শুয়ে আছেন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগী



১৯১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের ক্যাম্পফান্সটোন-এর একটি জরুরি হাসপাতালে শুয়ে আছেন সার সার ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগী৷ সারা বিশ্বেই সে সময় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল ফ্লু৷ ধারণা করা হয়ে থাকে, এই ফ্লু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল ক্যানসাস থেকেই৷ সারা বিশ্বে প্রাণ হারিয়েছিল কমপক্ষে ২ কোটি মানুষ৷

ইন্টারনেটেও সোয়াইন ফ্লু ‘ভাইরাস’


সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণ নিয়ে জনমনে আতংকের সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু সুযোগ সন্ধা

নী প্রতিষ্ঠান ‘সোয়াইন ফ্লু’ শিরোনাম দিয়ে ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ভাইরাস বা ভুয়া মেইল ছড়াচ্ছে৷

সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণকে কেন্দ্র করে জনমনে আতংকের সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু সুযোগ সন্ধানী প্রতিষ্ঠান ‘সোয়াইন ফ্লু' শিরোনাম দিয়ে ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ভাইরাস বা ভুয়া মেইল ছড়াচ্ছে৷ ইন্টারনেট জগতে নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ড মাইক্রো‘র বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর দিয়েছে৷ জাপান ভিত্তিক সফটওয়ার তৈরির এই প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ভুয়া মেইল বা বিজ্ঞাপনধর্মী মেইল ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো তথা স্প্যামাররা সোয়াইন ফ্লু নিয়ে মানুষের আগ্রহের সুযোগটিকে দ্রুত তাদের স্প্যাম ছড়িয়ে দেয়ার কাজে লাগিয়েছে৷

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে সারাবিশ্বে ১১ টি দেশে ৩৩১ জনের দেহে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা – ডাব্লিউএইচও৷ মেক্সিকো থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে এবং সেখানে এখন পর্যন্ত ৮৪ জন ব্যক্তি সোয়াইন ফ্লু'তে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে৷ এছাড়া মেক্সিকোর বাইরে আমেরিকায় এক শিশু এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছে৷
-------------------------------
http://www.dw-world.de
---------------------------------